বদলাবে উত্তরের অর্থনীতিও

0

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : পদ্মা সেতু উত্তরের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের মেলবন্ধন আরও মজবুত করবে। বিশেষ করে কৃষি ক্ষেত্রে ঘটবে যুগান্তকারী পরিবর্তন, ঘুরবে অর্থনীতির চাকা। উত্তরের সুগন্ধি চাল, রংপুরের হাঁড়িভাঙা, রাজশাহীর ফজলি আম, দিনাজপুরের লিচুর খুলবে দক্ষিণে নতুন বাজার। এ ছাড়া পোলট্রি, গবাদি পশুরও বাজার পাবে উত্তরের মানুষ দক্ষিণাঞ্চলে। অন্যদিকে দক্ষিণের ইলিশ, তরমুজ, নারিকেল ও পান-সুপারির বাজারের দুয়ার খুলবে উত্তরে। উৎপাদিত কৃষিপণ্যও খুব সহজে আনা-নেওয়া করতে পারবে এ দুই অঞ্চলের মানুষ। কৃষি বিশেষজ্ঞ, বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।

কৃষিসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে ৫০ থেকে ৫৫ লাখ মেট্রিক টন আমন, আউস ও বোরো ধান প্রতি বছর উদ্বৃত্ত থাকে। এসব উদ্বৃত্ত ধান এ অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ অন্যান্য অঞ্চলে যেত। পদ্মার ওপারে যোগাযোগব্যবস্থা ভালো না থাকায় বরিশালসহ দক্ষিণের অন্য জেলাগুলোয় এসব ধান যেত না। পদ্মা সেতু চালু হলে উদ্বৃত্ত ধানের একটি অংশ খুব সহজেই পদ্মার ওপারের জেলাগুলোয় পাঠানো যাবে। এ ছাড়া এ অঞ্চলের সুগন্ধি চালের কদর রয়েছে সারা দেশে। পদ্মা সেতুর কারণে দক্ষিণের মানুষ খুব সহজেই সুগন্ধি ধানের চালের স্বাদ পাবে। অন্যদিকে আসন্ন কোরবানির ঈদ উপলক্ষে রংপুর বিভাগে কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে ১৩ লাখের ওপর। এ অঞ্চলে এবার কোরবানির পশুর চাহিদা ১০ লাখের মতো। ৩ লাখ গরু-খাসি উদ্বৃত্ত রয়েছে। প্রতি বছর এসব পশু ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য স্থানে যেত। এবার খামারিরা আশা করছেন বরিশালসহ অন্য জেলাগুলোয় কোরবানির পশু নিয়ে যাবেন ব্যাপারিরা। এ অঞ্চলের আলুর চাহিদা সারা দেশে। কিন্তু পদ্মা নদীর কারণে দক্ষিণের জেলাগুলোয় খুব একটা আলু যেত না। অনেক সময় এ অঞ্চলের ব্যবসায়ী ও চাষিরা আলুর ন্যায়্য দাম না পেয়ে রাস্তায় আলু ঢেলে প্রতিবাদ সমাবেশও করেছেন। আলু চাষি ও ব্যবসায়ীরা আশা করছেন দক্ষিণে এখন থেকে প্রচুর আলু যাবে। রংপুরের হাঁড়িভাঙা রাজশাহীর ফজলি, ল্যাংড়া আম, দিনাজপুরের বিখ্যাত লিচুও এবার পাড়ি দেবে পদ্মা সেতু- এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া এ অঞ্চলের উৎপাদিত মাল্টার চাহিদাও রয়েছে। এখানকার মাল্টা দক্ষিণের মানুষের কাছে যাবে এখন থেকে। অন্যদিকে বরিশাল অঞ্চল থেকে খুব সহজেই উত্তরে আসবে ইলিশ, দেশখ্যাত তরমুজ, নারিকেলসহ কয়েকটি পণ্য।

বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলে মনে হচ্ছে পদ্মা সেতু কৃষি সেক্টরে দুই অঞ্চলের অর্থনীতির চালিকাশক্তি আরও মজবুত করবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, ঢাকার খামারবাড়ির অতিরিক্ত উপপরিচালক আবু সায়েম বলেন, ‘পদ্মা সেতু দুই অঞ্চলের কৃষি খাতকে একটি নতুন বন্ধনে আবদ্ধ করবে। দুই অঞ্চলে যেহেতু শিল্পপ্রতিষ্ঠান কম তাই কৃষিই দুই অঞ্চলের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’ দুই অঞ্চলে কৃষিপণ্য কেনাবেচায় অর্থনৈতিকভাবে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে বলে তিনি মনে করেন। বরিশালের স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক দখিনের খবরের সম্পাদক কাজী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, ‘পদ্মা সেতু দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চলের মধ্যে নতুন সেতুবন্ধ সৃষ্টি করবে। দুই অঞ্চলই কৃষিনির্ভর। দক্ষিণের কৃষি তরমুজ, নারিকেল ও ইলিশের ওপর নির্ভরশীল; তেমনি উত্তরের কৃষি ধান, আম, লিচু, গবাদি পশু ইত্যদির ওপর নির্ভরশীল। পদ্মা সেতু উত্তর-দক্ষিণের অনেক মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে সহায়তা করবে।’ তিনি কয়েকজন ব্যবসায়ীর বরাত দিয়ে বলেন, ‘সেতু উদ্বোধন হলেই রংপুরের হাঁড়িভাঙা আম ও দিনাজপুরের লিচু আনার প্রস্তুতি নিয়েছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী।’ উল্লেখ্য, ২৫ জুন জাঁকজমকভাবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করা হবে। ২৬ জুন সকাল ৬টা থেকে পদ্মা সেতুতে যানবাহন চলাচলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.