জাতিসংঘে উজ্জ্বল বঙ্গবন্ধু, উজ্জীবিত শেখ হাসিনা । বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু

0

আজ থেকে ২২ বছর আগে ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর আমাদের মহান নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে এ মঞ্চে দাঁড়িয়ে সাধারণ পরিষদের এক মহান অধিবেশনে ভাষণ দিচ্ছিলেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে, জাতির জনকের কন্যা হিসেবে এই অনন্য বিশ্ব ফোরামে বক্তব্য রাখার বিরল সম্মান ও সুযোগ আমাকে আবেগাপ্লুত করে তুলেছে।

– প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (২৪ অক্টোবর, ১৯৯৬ জাতিসংঘের ৫১তম সাধারণ অধিবেশনের ভাষণ)

পিতার দেখানো সেই পথে হাঁটেন কন্যা শেখ হাসিনা। নিজের মত-অভিমত বিশ্ব দরবারে প্রতিফলিত করেনও তার (বঙ্গবন্ধু) মতো করে। যার সবচেয়ে সুন্দর প্রাতিষ্ঠানিকীকরণটা করেছেন ২৫ বছর আগে দেওয়া জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ওই ভাষণের মধ্য দিয়ে, যেন পথ হারানো বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব ফিরিয়ে এনেছিলেন কন্যা শেখ হাসিনা। এদিন পিতার বলা কথাগুলোই বিশ্বকে নতুনভাবে, নতুন মোড়কে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। সেদিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গোটা বাঙালি জাতি এমনকি তৃতীয় বিশ্বের নেতারাও আপ্লুত হয়েছিলেন। বাংলাদেশ স্বস্তি পেয়েছিলেন এই ভেবে যে, আন্তর্জাতিকীকরণের সবচেয়ে বড় প্লাটফর্মে বাংলাদেশ তার হারানো নেতার যোগ্য উত্তরসূরি ফিরে পেল; আর তৃতীয় বিশ্ব পেলেন আরেকজন ‘হেভিওয়েট নেতা’।

‘আমরা কেমন ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা করি, মানস চক্ষে দেখি?’ এই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে সেদিন নিজেই রবীন্দ্রনাথকে উদ্ধৃত করে উত্তর দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। বলেছিলেন,

চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির,

জ্ঞান যেথা মুক্ত, যেথা গৃহের প্রাচীর

আপন প্রাঙ্গণ তলে দিবস শর্বরী

বসুধারে রাখে নাই খন্ড ক্ষুদ্র করি’

যেথা বাক্য হৃদয়ের উৎসমুখ হতে

উচ্ছ্বসিয়া উঠে, যা নির্বারিত স্রোতে

দেশে দেশে দিশে দিশে কর্মধারা ধায়

অজস্র সহস্রবিধ চরিতার্থতায়

সেদিন এমন বাংলাদেশের স্বপ্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা দেখিয়েছিলেন, যেখানে স্বাধীনতা হবে ভয় শূন্য অর্থাৎ মানুষের মধ্যে কোন দ্বিধা-সংশয় থাকবে না। জ্ঞান হবে সবার, সম্মানের সাথে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকবে মানুষ। প্রধানমন্ত্রীর সেই ভাষণের পর আড়াই যুগ পার হয়েছে। বিশ্বাস করি- নানা চড়াই-উৎড়াই ও ষড়যন্ত্র থাকলেও বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে।

এরপর ১৯৯৯, ২০০০ এবং ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর সবমিলিয়ে মোট ১৭ বার জাতিসংঘে ভাষণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এবার হবে ১৮তম। যতবারই শেখ হাসিনা জাতিসংঘে ভাষণ দিয়েছেন, ততবারই এর সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ও দায়িত্ববান সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের দৃঢ় অঙ্গীকার বিশ্ববাসীকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ, দারিদ্র, পরিবেশ বিপর্যয়, শান্তিরক্ষা কার্যক্রমসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইস্যু সমাধানের দাবি যেমন জানিয়েছেন, তেমনি জাতিসংঘের সূক্ষ্ণ সমালোচনায়ও শামিল হয়েছেন বিশ্বব্যাপী নিপীড়িত ও শরণার্থী মানুষের দুঃখ-দুর্দশার চিত্র তুলে ধরে। চোখে আঙুল দিয়ে বলেছেন, এ জাতীয় ঘটনাকে অগ্রাহ্য করে শান্তিপূর্ণ, ন্যায্য ও টেকসই সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম জাতিসংঘে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রায় প্রতিবারই বাবার বক্তব্য উদ্ধৃত করতে দেখা গেছে কন্যা শেখ হাসিনাকে। আপ্লুত হয়েছেন ১৫ অগাস্ট, ১৯৭১-এ হারিয়ে ফেলা বাবা-মা, ভাই-ভাবী, চাচা-ফুফার নৃশংস হত্যার গল্প শোনাতে গিয়ে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে নিজের প্রতিবাদের কথাও বলেছেন অবলীলায়। ১৯৯৯ সালে ৫৪ তম অধিবেশনে তিনি বলেন, “স্বৈরাচারী সরকার আমার ওপর অনেক অত্যাচার নির্যাতন করেছে, আমি বারবার কারাবরণ করেছি এবং বেশ কয়েকবার আমাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য আমার লক্ষ্য থেকে কোনো কিছুই আমাকে বিরত করতে পারেনি।”

জাতিসংঘ অধিবেশনে মাত্র একবার কথা বলার সুযোগ পেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু, ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। পরের সেপ্টেম্বর দেখার সুযোগ তার হয়নি। এর আগেই নৃশংস উপায়ে স্বজাতির হাতে প্রাণ দিতে হয় তাঁকে। জাতিসংঘের ২৯তম সাধারণ পরিষদের সেই ভাষণে বঙ্গবন্ধু প্রায় ২৫টি ইস্যু তুলে ধরেছিলেন; যা তৎকালীন বাংলাদেশ তো বটেই, গোটা বিশ্বের পররাষ্ট্রনীতিকে নাড়া দিয়েছিল। বিশ্বের সর্বোচ্চ সংস্থায় বাংলায় উচ্চারিত এ ভাষণটি আজও বঞ্চিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বলিষ্ঠ ও সাহসী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত।

নিজ দেশের জগগণের শক্তির প্রতি পূর্ণ আস্থা রেখে সেদিন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘‘আমাদের মতো দেশসমূহ, যাদের অভ্যুদয় সংগ্রাম ও ত্যাগের মধ্য দিয়ে, এই আদর্শে বিশ্বাসই তাদের বাঁচিয়ে রাখবে। আমাদের কষ্ট স্বীকার করতে হতে পারে। কিন্তু আমাদের ধ্বংস নাই। এই জীবন যুদ্ধের মোকাবেলায় জনগণের প্রতিরোধ ক্ষমতা ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞাই শেষ কথা। আত্মনির্ভরশীলতাই আমাদের লক্ষ্য। জনগণের ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগই আমাদের নির্ধারিত কর্মধারা। এতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নাই যে, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং সম্পদ ও প্রযুক্তিবিদ্যায় অংশীদারিত্ব আমাদের কাজকে সহজতর করতে পারে, জনগণের দুঃখ-কষ্ট লাঘব করতে পারে। কিন্তু আমাদের ন্যায় উদীয়মান দেশসমূহের অবশ্যই নিজেদের কার্যক্ষমতার প্রতি আস্থা রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, শুধু জনগণের ঐক্যবদ্ধ ও সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই আমরা আমাদের নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে সক্ষম হতে পারি, গড়ে তুলতে পারি উন্নততর ভবিষ্যৎ।’’

শহীদদের অবদান স্বীকার করে জাতির জনক সেদিন বলেছিলেন, ‘‘স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার অর্জনের জন্য এবং একটি স্বাধীন দেশে মুক্ত নাগরিকের মর্যাদা নিয়া বাঁচার জন্য বাঙালি জনগণ শতাব্দীর পর শতাব্দীব্যাপী সংগ্রাম করিয়াছেন, তাহারা বিশ্বের সকল জাতির সঙ্গে শান্তি ও সৌহার্দ্য নিয়া বাস করিবার জন্য আকাঙ্ক্ষিত ছিলেন।… শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে সকল মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের উপযোগী একটি বিশ্ব গড়িয়া তুলিবার জন্য বাঙালি জাতি পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের এই অঙ্গীকারের সহিত শহীদানের বিদেহী আত্মাও মিলিত হইবেন।’’

ভাষণের শেষ দিকে বাঙালি শক্তিমত্তার জানান দিয়েছিলেন জাতির পিতা। কিছুটা ৭ মার্চের গর্জে ওঠা সুরে বলেছিলেন, “বাংলাদেশের মতো যেই সব দেশ দীর্ঘ সংগ্রাম ও আত্মদানের মাধ্যমে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করিয়াছে, কেবল তাহাদেরই এই দৃঢ়তা ও মনোবল রহিয়াছে, মনে রাখিবেন সভাপতি, আমার বাঙালি জাতি চরম দুঃখ ভোগ করিতে পারে, কিন্তু মরিবে না, টিকিয়া থাকিবার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমার জনগণের দৃঢ়তাই আমাদের প্রধান শক্তি।’

বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণের প্রতিটি শব্দ শুধু ৭ কোটি বাঙালি নয়, ৩০ লাখ শহীদও যেন অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছিলেন। এ ভাষণের আবেদন কখনও শেষ হওয়ার নয়, গত ৪৭ বছরেও হয়নি।ভাষণের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এটাকে ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ আখ্যা দিয়েছিলেন বিশ্বনেতারা, আর বাংলাদেশের কাছে তা কূটনৈতিক সম্পর্কের চিরঞ্জীব এক সনদ।

বাংলাদেশের সঙ্গে জাতিসংঘের সম্পর্কের শুরুটাও বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে; ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। জাতিসংঘ মহাসচিব উথান্ট সে সময় পাকিস্তানি গণহত্যাকে ‘মানব ইতিহাসের কলঙ্কিত অধ্যায়’ আখ্যা দিয়ে ৭ কোটি বাঙালির পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। পাশে ছিলেন প্রাণভয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়া লাখ লাখ বাংলাদেশি শরণার্থীকে সাহায্য করেও। জাতিসংঘের এ সম্পৃক্তির ফলে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম কৌশলগতভাবেও লাভবান হয়। যদিও সম্পর্ক উত্তরোত্তর গভীর হওয়ার এই ধাপটি ততটা মসৃণ ছিল না। স্বাধীনতা প্রাপ্তির পরের বছরই (১৯৭২ সাল) বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্য পদ প্রাপ্তির তৎপরতা শুরু করলে তাতে বাঁধ সাধে পাকিস্তান। জুলফিকার আলী ভুট্টোর প্ররোচনায় চীন ভেটো দিলে সদস্যপদ লাভে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ। ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে ১৯৭৩ সালেও। পরবর্তীতে অবশ্য অসাধারণ দক্ষতায় এই সমস্যা মোকাবেলা করেন বঙ্গবন্ধু। ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭৪, বাংলাদেশ সময় ভোর ৪টায় বাংলাদেশকে ১৩৬তম সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় জাতিসংঘ। বৈশ্বিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রধানতম এ চ্যালেঞ্জে জয়ী হয়ে সেদিন উচ্ছ্বাস দেখিয়েছিলেন জাতির জনক। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, “আমি সুখী হয়েছি যে, বাংলাদেশ জাতিসংঘে তার ন্যায্য আসন লাভ করেছে।” এর ঠিক এক সপ্তাহ পর সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেন জাতির জনক।

জাতিসংঘ ইস্যুতে বঙ্গবন্ধুর শুরু করা সেই পথ শুধুই সামনের দিকে এগিয়ে গেছে। প্রতিবছরই বেড়েছে কার্যপরিধি ও কর্মতৎপরতা। শান্তি প্রতিষ্ঠার স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘ থেকে বঙ্গবন্ধু পেয়েছিলেন মর্যাদাপূর্ণ ‘জুলিও কুরি’ পদক। আর তার কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ জাতিসংঘের শান্তি মিশনে প্রথম অবস্থানে। বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক এলাকায় কাজ করে এখন পর্যন্ত ১৩২ শান্তিরক্ষী প্রাণ দিয়েছেন বাংলাদেশের হয়ে। বিশ্ব শান্তি রক্ষায় বাংলাদেশের এ ত্যাগ এক গর্ব ও অহংকারের উপাখ্যান।

বর্তমানে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩ শতাংশ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে। বাংলাদেশে এই সংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি। ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ আসাম, ত্রিপুরা, ঝাড়খন্ড, ওডিশা, আন্দামান-নিকোবর, ধানবাদ, মানভূম, সাঁওতাল পরগনা প্রভৃতি এলাকায়ও বাংলা ভাষার প্রচলন রয়েছে। নেপাল, মালয়েশিয়া, কোরিয়া, চীন, সিঙ্গাপুর, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাজ্য, ইতালি ইত্যাদি দেশে বিপুল পরিমাণ বাংলাভাষী অভিবাসী ও প্রবাসী রয়েছেন।

বাংলাদেশে হাজারও বাংলা ভাষাভাষী পণ্ডিত এসেছেন। বিশ্ব জয় করেছেন রবীন্দ্রনাথ-অমর্ত্য সেনদের মত বাঙালিরাও। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর আগে এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না, যিনি বাংলা ভাষাকে বিশ্ব পরিসরে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৩ সালে প্রথম বাঙালি হিসেবে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। তার মাধ্যমে বিশ্বের দরবারে প্রথম বাংলা ভাষা পরিচিত পেয়েছিল। কিন্তু বিশ্বাঙ্গনের কোথাও তিনি বাংলায় বক্তব্য দেননি। ১৯৯৮ সালে অমর্ত্য সেন অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পান। নোবেল পুরস্কার পাওয়া দ্বিতীয় বাঙালি তিনি। তিনিও তার বক্তব্যটি রেখেছিলেন ইংরেজিতে। বাংলাদেশের মুহম্মদ ইউনূস ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান। বাঙালি ড. মুহম্মদ ইউনূস চাইলে তার নোবেল বিজীয় বক্তব্যেও বাংলা ভাষাকে প্রাধান্য দেন নাই।

অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুই প্রথম ব্যক্তি, যিনি গোটা বিশ্বের সামনে প্রথমবারের মত বাংলায় বক্তৃতা করেছেন। যারা ধারাবাহিকতা এখন কন্যা শেখ হাসিনা বজায় রেখেছেন। জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে ইতিমধ্যেই শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। দেশের উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের জন্য ভূয়সী প্রশংসা পাওয়ার পাশাপাশি ‘ক্রাউন জুয়েল’ বা ‘মুকুট মণি’ হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছেন তিনি। ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন নিয়ে নবম বার্ষিক আন্তর্জাতিক সম্মেলন থেকে তাকে এই উপাধিতে ভূষিত করে আর্থ ইনস্টিটিউট, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, গ্লোবাল মাস্টার্স অফ ডেভেলপমেন্ট প্র্যাকটিস এবং ইউএন সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সল্যুশনস নেটওয়ার্ক।

শুধু ‘মুকুট মণি’ উপাধি নয়, বাংলাদেশের অসাধারণ উন্নয়নে ভূয়সী প্রশংসাও করা হয়েছে ওই অনুষ্ঠানে। ইউএন সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সল্যুশনস নেটওয়ার্কের প্রেসিডেন্ট ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশিষ্ট উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ জেফ্রি স্যাক্স অধিবেশনে উন্নয়ন কার্যক্রমে প্রধানন্ত্রীর অবদান উল্লেখ করে জেফ্রি স্যাক্স বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমরা আপনার কথা শুনতে চাই, বিশেষ করে এই জন্যে যে, আমরা যখন পৃথিবীর দেশগুলোর টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের অগ্রগতি বিশ্লেষণ করি যা প্রতি বছর জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন সমাধান নেটওয়ার্ক করে থাকে, ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অগ্রগতিতে বিশ্বে প্রথম হয়েছে। তাই আমরা সেই অর্জনের জন্য আপনাকে অভিনন্দন জানাতে চাই।”

এদিকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে তার সম্মানে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের উত্তর লনের বাগানে একটি বেঞ্চ উৎসর্গ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে একটি বৃক্ষরোপণ করেছেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন, ‘বৃক্ষটাও শতবর্ষের ওপর টিকে থাকবে এবং শান্তির বার্তাই বয়ে বেড়াবে।’

জাতিসংঘে এভাবেই উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়েছে বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা। এর আগে তিনি জাতিসংঘ থেকে জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকি মোকবেলার জন্য ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’; ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন ও তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নে বিশেষ অবদানের জন্য ‘আইটিইউ’ অ্যাওয়ার্ডসহ সংস্থাটি থেকে বেশ কয়েকটি পুরস্কার লাভ করেন শেখ হাসিনা। এছাড়াও বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে প্রথমবারের মত জাতিসংঘ সদর দফতরে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বঙ্গবন্ধুকে ‘ফ্রেন্ড অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ উপাধি দিয়েছেন উপস্থিত বিশ্ব নেতারা। জাতিসংঘের সবকয়টি অঙ্গ সংস্থা শুরু থেকেই বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা পরিবর্তনের জন্য কাজ করছে। বিবাদের শান্তিপূর্ণ মীমাংসায় জাতিসংঘ ঘোষিত নীতি অনুসরণ করে বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানি বণ্টন বিষয়ক দীর্ঘকালের সমস্যা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানে সফল হয়েছে।

চলতি বছরে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সাধারণ বিতর্কের উদ্বোধনী অধিবেশনে ‘বিজনেস গোলটেবিল : ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল’ অনুষ্ঠানে যোগদানের কর্মসূচি রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। ডারবান ডিক্লারেশন অ্যান্ড প্রোগ্রাম অব অ্যাকশন গ্রহণের ২০তম বার্ষিকী উপলক্ষে সাধারণ পরিষদের একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকেও যোগ দেবেন তিনি। এছাড়া তিনি ‘হোয়াইট হাউস বৈশ্বিক কোভিড-১৯ শীর্ষ সম্মেলন: মহামারীর সমাপ্তি এবং আরও ভালো অবস্থা গড়ে তোলা’- শীর্ষক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। ওইদিন বিকালে শেখ হাসিনা ‘রোহিঙ্গা সংকট: একটি টেকসই সমাধানের জন্য করণীয়’ শীর্ষক একটি উচ্চ পর্যায়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। এর বাইরেও তিনি ২৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সুইডিশ মিশন আয়োজিত ‘জাতিসংঘের সাধারণ কর্মসূচি: সমতা ও অন্তর্ভুক্তি অর্জনের পদক্ষেপ’ শীর্ষক নেতাদের নেটওয়ার্কের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।

ইতিহাসের স্বরূপ অনুসন্ধান করলে পাওয়া যাবে, বঙ্গবন্ধু দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন; আর তাকে রক্ষার দায়িত্ব পালন করছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ধারাবাহিকতাতে স্বৈরশাসক এরশাদের পতন হয়, বিএনপি-জামায়াতের মুখোশ উন্মোচন হয় এবং বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের রুদ্ধ দ্বার খোলে। আজ সেই ধারবাহিকতাতেই ১৮ তম বারের মত জাতিসংঘ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সত্যের স্বরূপ সাদা। সেই সাদার পক্ষে থাকতে পক্ষপাতিত্ব নিয়েই বলছি- বিশ্বের সর্বোচ্চ এ সংস্থা (জাতিসংঘ) থেকে অতীতে বাংলাদেশ যা পেয়েছে, বর্তমানে যা যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতে যা পাবে; সবকিছুতেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার অবদান থাকবে। এখানেই উজ্জ্বল বঙ্গবন্ধু, উজ্জীবিত শেখ হাসিনা।

মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্‌পু পাবনার সন্তান মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্‌পুর জন্ম ১৯৪৯ সালে। ছাত্রজীবনে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ও সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণকারী সাহাবুদ্দিন চুপ্‌পু ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) ক্যাডার হিসেবে যোগ দেন। বিচারকের বিভিন্ন পদে চাকরি শেষে ২৫ বছর পর ২০০৬ সালে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসর নেন। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পরপরই আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর উপর হামলা হয়। যাতে হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনের ঘটনা ঘটে। পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে ওসব ঘটনার তদন্তে ‘কমিশন’ গঠন করেন, যার প্রধান ছিলেন সাহাবুদ্দিন চুপ্‌পু। ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্‌পু দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.