নতুন বইয়ের ঘ্রাণ এবং লেখকের আনন্দ । জসিম মল্লিক

0

ঘরে ঢুকেই দুটো পার্সেল পেলাম আজকে। একটা অরিত্রির অর্ডার দেওয়া আমার জন্য এসিকসের কেডস এবং আর একটা বইয়ের প্যাকেট। সাড়ে বারো হাজার কিলোমিটার দূর থেকে এসেছে। এই প্যাকেটের জন্যেই আমি অপেক্ষা করছিলাম। একদম ঝক ঝকে নতুন বই। নিজের লেখা বই। নতুন বই মানেই হচ্ছে আবেগ, সন্তান ভূমিষ্ট হলে যেমন লাগে তেমন আবেগ। বই যেনো বা সন্তান। তাই প্যাকেট খুলেই বই হাতে নিয়ে চুমু খেলাম, বুকে জড়িয়ে ধরলাম। জেসমিনকে বললাম একটু ছুঁয়ে দেখতে। প্রতিবার আমার এরকম হয়। নতুন বই হাতে নিলেই কেমন একটা আনন্দের অনুভূতি হয়। শহরন জাগে শরীরে। প্রিয়জন কালামকে অনেক ধন্যবাদ বইগুলো পাঠানোর জন্য।
যারা লেখালেখি করেন তারাই জানেন লেখালেখির যন্ত্রণা কত তীব্র। কত অনন্ত ত্যাগ করেন লেখালেখির মানুষেরা, কত তাদের রক্তক্ষরণ সেটা অন্য কেউ বুঝবে না। কৈশোর থেকেই যখন আমার বই পড়া বা লেখালেখির প্রতি আগ্রহ জন্মায় তখন আমি জানতাম না যে এটাই হবে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আনন্দের উৎস, বেঁচে থাকার প্ৰেৱণা। তখন থেকেই এক অনন্ত লড়াই সংগ্রাম ছিল আমার। টিকে থাকা না থাকার দোলাচল। কিন্তু আমি সহজে হার মানতে নারাজ। আমার স্বপ্ন আমাকে হার মানতে দেয়নি। আমি হচ্ছি স্বপ্নবাজ। স্বপ্ন দেখতে পয়সা লাগে না, কেউ জানতেও পারে না। আমি বুঝতাম কোথায় আমার আনন্দ। যা করে আনন্দ তাই আমি কৱি। আমি যেহেতু নিৰ্জন মানুষ,গৰ্তজীবি মানুষ তাই লেখালেখি আর বই পড়া হয়ে ওঠে আমার অবলম্বন।
বরিশাল ছেড়ে শূন্য হাতে ঢাকা এসেছিলাম লেখালেখির জন্যই। ঢাকার জীবনে আমি এক কঠিন লড়াইয়ে অবতীৰ্ণ হয়েছিলাম। অনন্ত সংগ্রাম ছিল আমাৱ। তারপর একদিন পারি জমালাম বিদেশ। সেটাও একটা চ্যালেঞ্জ ছিল আমার জন্য। আর আমি তো একা না, আমার সাথে আছে একটি পুরো পরিবার। বিদেশে এসেও আমি কঠোর সংগ্রাম করেছি। সবাইকে নিয়ে ভাল থাকার জন্য। আমার পরিপাৰ্শ্ব, আমাৱ বন্ধু, আত্মীয় পরিজনকে নিয়ে ভাল থাকাৱ জন্য। প্ৰকৃতি সবসময় আমাৱ সহায়ক হয়েছে।
সবকিছু ছাপিয়ে আমি লেখালেখি থেকে নিজেকে দুর সরিয়ে রাখিনি কখনো। বিদেশের কঠিন জীবনে নিয়মিত সাহিত্য চৰ্চা অব্যাহত রাখা সহজ কাজ না। সে কাজটাও আমি করি। কেনো করি? কারণ আমি সাহিত্য ভালবাসি। কারণ আমি সাহিত্যকদের ভালবাসি, যারা সাহিত্য পাঠ করেন তাদের ভালবাসি, আমার পাঠকদের আমি ভালবাসি। সবচেয়ে বড় কারণ লিখে আমি আনন্দ পাই। পাঠকরাই আমার বড় অনুপ্রেরণা।
এবছর একুশের গ্রন্থমেলায় অনন্যা থেকে আমার এই নতুন দুটি বই প্রকাশিত হয়েছে। নতুন বই দুটোর পাশাপাশি আমার পুৱনো বইগুলোও পাওয়া যাবে অনন্যায়। বইগুলোর প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রুব এষ। বই মেলা শুরু হবে ১৮ মার্চ থেকে।
টরন্টো ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.