কারাগারের হলদু পাখিরা। মুহম্মদ নূরুল হুদা
কারাগারের হলদু পাখিরা
– মুহম্মদ নূরুল হুদা
যৌবনের শুরুতেই জেলের প্রাচীরে
দেখেছো অবাক চোখে পাখি এক জোড়া;
সে পাখি কুটুম্ব পাখি হলুদবরন,
এ বাংলার বিলে-ঝিলে পাখিদের ওড়া।
সকালেই আসে পাখি, যায় দ্বিপ্রহরে,
বিকেল নীলের নীড়ে, সাঁঝে ফেরে ঘরে।
তুমি তার অপেক্ষায় বসে থাকে স্থির;
কারাগারে মুক্তবন্দিঃ কারাগার নীড়।
ইচ্ছে হয় উড়ে যাবে পাখির ডানায়
রাঢ় বঙ্গ পার হয়ে কাছে কিংবা দূরে;
ভুবন ভ্রমিয়া শেষে কানায় কানায়
মুক্তির মীমংসা বুকে আসবেই ঘুরে।
জন্মেই মানবপাখি অচিন খাঁচায়
লালন করেছো বুকে স্বাধীনতা সাধ,
বাউলের একতারা তোমাকে বাজায়,
মানবজমিন আদি করেছো আবাদ।
ধর্মে-বর্ণে মানুষকে করোনি প্রভেদ,
মানবতা মূল ধর্ম, সিদ্ধ সদাচার;
কবিতার কর্মধর্ম, সুন্দর-অভেদ,
বিশ্বনিকেতনে মুক্তি, প্রশান্তি অপার।
পূর্বপুরুষেরা ফিরেছিল পাখি হয়ে নীড়ে,
গণবাঙালির গঙ্গা-মধুমতী তীরে;
স্বদেশের সীমা ছেড়ে সবার স্বদেশ,
পৃথিবী সীমানাহীন মুক্ত আদিদেশ।
তুমি আমি সেই আদিদেশের সন্তান
বুকে আজো আদিপিতা মাতার সুঘ্রাণ;
উপনিবেশের ঘের পার হয়ে তুমি
শনাক্ত করেছো জাতি, আর জাতিভুমি।
ভাষায়, ভুমিতে আর সখ্যে সংস্কৃতির
দেশে দেশে মানুষের আছে ভিন্ন নীড়;
জাতিসত্যে বিভাজিত সব নীড় মিলে
অভিন্ন মানবনীড়, ধরণী-নিখিলে।
পাখিরা তো আসে উড়ে দেশ থেকে দেশে
পাখিরা তো যায় উড়ে বাউলের বেশে;
কাঁটাতার ঘেরা এই রাষ্ট্র-কারাগারে
পাখিরাও চোখ মারে খুব আড়েঠারে।
জাতিরাষ্ট্র পরিবার, বিচিত্র সংসার
সাজিয়েছে জলেস্থলে নীলের ভিটায়;
শত শতাব্দীর রাষ্ট্র কাঁটাতার
পাখিরা পেরিয়ে যায় তবু ধৃষ্ঠতায়।
হলুদ পাখিরা সেই মুক্ত পাখি-সূত
অভিন্ন মানব-রাষ্ট্রের যোগ্য রাষ্ট্রদূত।
তারা আসে তারা যায় স্বাধীন বিভায়,
প্রাণে প্রাণে যুক্ত তারা, প্রাণ-সীমানায়।
প্রাণ হও প্রাণ হও, নও নানা প্রাণী;
প্রাণ-সমতায় প্রাণী শুদ্ধ ধ্যানী-জ্ঞানী।
২৮.০১.২০২১