আগামী কোরবানীর ঈদে মাঠ কাঁপাতে আসছে পাবনার বস

0

নিজস্ব প্রতিনিধি : কলো মিচমিচে গায়ের রঙ, উচ্চতা ৬ ফুট আর লম্বা ১০ ফুট। তিন বছর ধরে তিনি খেয়েছেন, নিজেকে তৈরী করেছেন। এক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে সম্পূর্ন দেশীয় পদ্ধতি। ইতিমধ্যে নজর কাড়তে শুরু করেছেন। সব প্রস্তুতি শেষে মাঠ কাঁপাতে আসছেন তিনি। তার নাম ‘পাবনার বস’। নাম শুনে আশ্চর্য হলেও এটাই সত্য। পাবনার বস হলো একটি ষাঁড় গরুর নাম।
পাবনার সুজানগর উপজেলার আব্দুল্লাহ আল মামুন তিন বছর ধরে লালন পালন করে তৈরী করেছেন পাবনার বসকে। যার ওজন দাবি করা হচ্ছে ৩৭ মণ। দাম হাঁকা হয়েছে ৫০ লাখ টাকা। ষাঁড়টির মালিক মামুনের দাবি, উত্তরাঞ্চলে এর চেয়ে বড় ষাঁড় গরু নেই। শুধু উত্তরাঞ্চল নয়, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ সহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরেও এর চেয়ে বড় ষাঁড়ের খোঁজ পাননি বলে জানিয়েছেন তিনি। পাবনার সুজানগর উপজেলার তাঁতীবন্দ ইউনিয়নের হুদারপাড়া গ্রামের মো: ওমর আলী প্রামাণিকের ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিন ভাই, এক বোনের মধ্যে সবার বড় মামুন।

ছাত্রজীবন থেকেই মামুনের স্বপ্ন ছিল বিশাল বড় ষাঁড় গরু পালন করে দেশবাসীর নজরকাড়া। আলাপকালে বিডি২৪ভিউজ কে মামুন জানান, তিন বছর আগে স্থানীয় একটি হাট থেকে এক লাখ টাকা দিয়ে হলস্টেইন জাতের একটি কালো রংয়ের বাছুর কিনে লালন-পালন শুরু করেন তিনি। স্বাস্থ্যকর পরিবেশে রেখে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে লালন-পালন করা ঐ বাছুর এক বছর যেতে না যেতেই চোখে পড়ার মতো একটি ষাঁড়ে পরিণত হয়। এরপর তিনি মনে-প্রাণে ষাঁড়টিকে উত্তরাঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং দৃষ্টিনন্দন ষাঁড়ে পরিণত করার স্বপ্ন দেখেন। নাম রেখেছেন ‘পাবনার বস’।

এক পর্যায়ে তিনি উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের পরামর্শক্রমে ষাঁড়টিকে সময়োপযোগী ওষুধপত্র খাওয়ানোর পাশাপাশি বিশেষ করে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে লালন-পালন করতে থাকেন। অবশ্য এজন্য তিনি প্রতি বছর বাড়ির পাশের জমিতে তিন বিঘা জমিতে ভুট্টা, জব এবং নেপিয়ার জাতের ঘাস আবাদ করেন। তাছাড়া কালাইয়ের ভুসি এবং ধানের খড়সহ অন্যান্য উপাদেয় খাবারতো আছেই।

মামুন বলেন, সবমিলিয়ে ষাঁড়টিকে প্রতি মাসে ২৫ হাজার টাকার খাবার খাইয়েছেন তিনি। এভাবে দীর্ঘ ৩ বছর লালন-পালন করার পর ১০ ফুট লম্বা এবং ৬ ফুট উচ্চতার পাবনার বসের বর্তমান ওজন হয়েছে প্রায় ৩৭ মণ। রোযার ঈদকে সামনে রেখে ষাঁড়টির দাম চাচ্ছি ৪৫ থেকে ৫০ লাখ টাকা। পাবনা ছাড়াও সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, ঢাকা থেকে ব্যাপারীরা কেনার জন্য দেখতে আসছেন। এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা দাম বলেছে। মামুন আরো জানান, আমার শখ ষাঁড় গরু লালন পালন করে বড় করা। সেই শখ থেকে কয়েক বছর ধরে আমি ষাঁড় গরু দেশীয় পদ্ধতিতে মোটাতাজা করি। ২০১৯ সালেও ঢাকার উত্তরা হাটে আমার দুইটা গরু ছিল সবচেয়ে বড়। যার ওজন ছিল ৪৫ মণ।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের ভেটেরিনারি সার্জন ডাঃ মোঃ আব্দুল লতিফ বিডি২৪ভিউজ কে জানান, স্থানীয় জনমত তথা সংশ্লিষ্ট বিভাগের তথ্যমতে ষাঁড়টি কেবল পাবনা জেলা নয়, উত্তরাঞ্চলের মধ্যে সর্ববৃহৎ এবং দৃষ্টিনন্দন। তাছাড়া কোন প্রকার কৃত্রিম খাবার না খেয়ে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খাবার খেয়ে বড় হওয়া ঐ ষাঁড়ের গুরুত্ব অনেক বেশি। আশা করি খামারী মামুন ভাল দাম পাবেন, তিনি আরো জানান খামারি মামুন সুজানগর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের পরামর্শে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে গরুটি মোটতাজা করন করেছেন, গরুটি মোটতাজা করনে কোন ধরনের এ্যান্টিবায়োটিক বা স্টেরয়েড ব্যবহার না করে শুধুমাত্র নিয়মিত কৃমিমুক্তকরণ ও টিকাদানের মাধ্যমে প্রাকৃতিক খাবার যেমন জার্মান ঘাস, লেপিয়ার ঘাস, ভূট্রা ঘাস, খড়, ভূষি , ভূট্রা ভাঙ্গা, ইত্যাদি প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে বড় করেছেন । গরুটির বর্তমান লাইভ ওজন প্রায় ৩৮ মন, আমাদের তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে এই গরুটি পাবনা সহ উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় গরু । করোনা পরিস্থিতিতেও মূল্যবান এই গরুটিকে বিত্তবানরা কোরবানীর জন্য উপযুক্ত দামে ক্রয় করলে এ অঞ্চলের খামারিরা এই ধরনের গরু পালনে আগ্রহী হবে বলে আমার বিশ্বাস । এদিকে প্রতিদিন উৎসুক নারী-পুরুষ পাবনার বস নামের ষাঁড়টি একনজর দেখতে মামুনের বাড়িতে ভীড় করছেন। কেউ তার সাথে সেলফি উঠছেন, কেউ তাকে ছুঁয়ে দেখছেন।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.