দীর্ঘদিন পর ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশনে উন্নয়নের ছোঁয়া

সরকারের নেয়া এই উদ্যোগ যেন বিফলে না যায় অনিময় ও দূর্নীতির কবলে পড়ে। দূর্নীতি ও অনিয়ম রুখে সরকারের উদ্যোগ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ জরুরী বলে মনে করেন এই জনপদের মানুষ।

0

পাবনা প্রতিনিধি : দীর্ঘদিনপর হলেও পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে জংশন ঈশ্বরদীতে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগতে শুরু করেছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের সাথে নতুন রেলপথ স্থাপন, লাইনের সংস্কার, পূণনির্মাণ, প্লাটফর্মের আধুনিকায়ন, প্লাটফর্ম ও শেডের সংস্কার, যাত্রীদের বিশ্রাম, বসবার জায়গা, আধুনিক টয়লেট, সিগন্যাল, রেলওয়ে ইয়ার্ড কম্পিউটারাইজসহ নানা উন্নয়ন কর্মকান্ড হাতে নিয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। দীর্ঘদিন পর হলেও এই উন্নয়নের ছোঁয়া পেয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন রেলওয়েতে যাতায়াতকারী যাত্রীসহ স্থানীয় বাসিন্দারা।

তবে সরকারের বিপুল পরিমান অর্থ’র বিনিময়ে ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশনের উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন হলেও অভিযোগ রয়েছে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহা ও প্রকল্প সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোন তথ্য প্রকাশ না করে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে পাকশীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা দুর্নীতির ও অনিমের আশ্রয় নিয়ে সরকারের জনকল্যাণ উদ্দেশ্যে অসৎ থাবা বসিয়েছেন। সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড ত্বরান্বিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দুর্নীতি ও অনিময় বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বৃটিশদের শাসনামলে তাদের পরিকল্পনায় গড়ে তোলা হয় পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে জংশন ও স্টেশন। বাংলাদেশ স্বাধীনের পর থেকে উল্লেখযোগ্য উন্নয়নের ছোঁয়া পড়েনি এই জংশন স্টেশনে। পুরাতন বিল্ডিং, ট্রেনের উচ্চতার চেয়ে কয়েক ফিট নিচু প্লাটফর্ম, ছাউনী ফুটো, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, নোংড়া টয়লেট ও যাত্রীদের বসবার স্থান, লাইনগুলো অতিপুরাতন ও নড়বড়েসহ মাদকাসক্ত, চোর ও ছিনতাইকারীদের অভয়ারণ্য, প্রতারকদের নিরাপদ আশ্রয়সহ নানা অসামাজিক কর্মকান্ডের নিরাপদ আশ্রয় ছিল ঈশ্বরদী রেলওয়ে স্টেশন এলাকা। প্রতি বছর যাত্রীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমান টাকা রাজস্ব সংগ্রহ করা হলেও বাড়েনি যাত্রী সেবার মান। সম্প্রতি রেলপথ মন্ত্রণালয় ৩৩৫ কোটি টাকার ‘রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নতুন রেললাইন নির্মাণ, নতুন রেলওয়ে স্টেশন স্থাপন, রেললাইন সংস্কার, প্লাটফর্ম সংস্কার, যাত্রীসেবার মানবৃদ্ধির লক্ষে টয়লেটের আধুনিয়কায়, রেলওয়ে স্টেশনে ইয়ার্ড ডিজিটালাইজকরণ’সহ নানামুখি যুগোপযোগী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, রেললাইন নির্মাণ, প্লাটফর্ম উচুঁকরণ, ওয়াল নির্মাণসহ বিভিন্ন কাজের সাথে শ্রমিকেরা নিয়োজিত রয়েছে। তবে সেখানে রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট বা কোন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই কাজগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে তেমন কোন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বা ব্যক্তিকে পাওয়া যায়নি। ইটের গাঁথুনী, ঢালাই, রড সোজা করা, বালু ও ইট টানা এমন কি ওয়েল্ডিং মেশিন চালানোর সাথে সম্পৃক্ত একাধিক শ্রমিকের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলেও তারা কোন কথা বলতে রাজি হননি। তাদের দাবী, আমরা এখানে শ্রমিক। কোন কথা বলা যাবে না। কাজ করতে এসেছি, কাজ করছি। কথা বলার দরকার হলে বসরা আছেন, তাদের সাথে আলাপ করতে হবে।

নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত বালু, ইট, রডসহ নির্মাণ সামগ্রী অধিকাংশই নিম্নমানের। কিন্তু এখানে দেখার বা বলার কেউ নেই এমন অভিযোগ স্থানীয় সচেতন বাসিন্দাদের। তাদের অভিযোগ, কাকে জিজ্ঞাসা করবো আর কে এই নিম্নমানের কাজের জবাব দেবেন।

স্থানীয় সচেতন ব্যক্তি আসাদুর রহমান বিরু বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানাই, দীর্ঘকাল পর হলেও এই ঈশ্বরদীতে রেলওয়েতে উন্নয়নের ছোঁয়া দিয়েছেন। এই জনপদে রেলপথে রোগী ও বয়স্ক যাত্রীর সংখ্যা অনেক। দীর্ঘদিন ধরেই তারা খুব কষ্ট করে রেলপথে যাতায়াত করছিল। রেলওয়ে স্টেশনের আধুনিকায়ন ও উন্নয়নের ছোঁয়ায় আজ ঈশ্বরদী বাসি হিসেবে গর্বিত মনে হচ্ছে।

আর স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মি আসাদুজ্জামান আসিফ বলেন, প্লাটফর্ম উচুঁ হওয়ায় রোগীদের যাতায়াতে আর বাঁধা রইলো না। খুব সহজেই ঈশ্বরদী থেকে রাজশাহী, ঢাকা ও কলকাতায় চিকিৎসার জন্য আসা রোগীরা ট্রেনে উঠে যাতায়াত করতে পারবেন। তার দাবী, প্লাট ফর্ম উচুঁ হয়েছে। এখন যাত্রীদের টয়লেট, বিশ্রামাগার ও ছাউনীগুলোর মেরামত ও আধুনিকায়ন জরুরী হয়ে গেছে। এগুলো হলেই আমাদের দীর্ঘদিনের দাবী পূরণ হবে।

ট্রেন যাত্রী ইকবাল হোসেন বলেন, ট্রেনের চেয়ে প্লাটফর্ম এতো নীচু ছিল যে, একজন সুস্থ মানুষ যেখানে উঠতে পারতো না, সেখানে অসুস্থ বা বৃদ্ধ-শিশুরা কিভাবে উঠবে। সরকারের এই যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণে সাধুবাদ জানাচ্ছি। পাশাপাশি একটি আধুনিক ও উন্নতমানের রেলওয়ে স্টেশন করতে আর যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার সরকার সেটাও বাস্তবায়ন করবেন এমন আশা রাখি।

পাকশীর স্থানীয় যুবলীগ নেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, বৃদ্ধ, নারী, শিশু ও অসুস্থ ব্যক্তিসহ প্রায় সবাইকেই খুব কষ্টেই ট্রেনে উঠানামা করতে হতো। দীর্ঘকাল পরেও আমাদের এই সমস্যা লাঘব হতে যাচ্ছে জেনে খুবই ভালো লাগছে।

এ ব্যাপারে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) আসাদুল হক বলেন, এই স্টেশনের বিদ্যমান সমস্যা সম্প্রতি রেলওয়ে বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দেখে গেছেন। মূলত তাদের কারণেই আজ এই স্টেশনে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, আধুনিক ও যুগোপযোগী করতে এই স্টেশনে সকল ধরণের সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।

তিনি বলেন, মান্ধাতামলের এনালগ প্রযুক্তি বাতিল করে কম্পিউটারাইজড ও ডিজিটাল ভাবে পুরো ইয়াদ ও স্টেশন এলাকাকে প্রযুক্তি নির্ভর করা হবে। পুরো ইয়াডকে ডিজিটাল রুপান্তর করে একটি কক্ষের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। নির্মাণ কাজে অনিয়ম ও নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের বিষয়ে তিনি বলেন, কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আমার কাছে নেই। এ ধরণের অভিযোগ পেলে তার খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবী, অবহেলিত এই রেলওয়ে জংশনে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগতে শুরু করেছে। তবে সরকারের নেয়া এই উদ্যোগ যেন বিফলে না যায় অনিময় ও দূর্নীতির কবলে পড়ে। দূর্নীতি ও অনিয়ম রুখে সরকারের উদ্যোগ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ জরুরী বলে মনে করেন এই জনপদের মানুষ।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.