র‍্যাব-৭ এর অভিযান সফল কাপ্তাইয়ে হাসিনা বেগমের হত্যাকারী নেত্রকোনা থেকে আটক

0

মাহফুজ আলম, স্টাফ রিপোর্টার : পুলিশের সহায়তায় র‌্যাব-৭ অভিযান চালিয়ে শনিবার নেত্রকোনা থেকে হাসিনা বেগমের হত্যাকারী মাহিবুর কামালকে আটক করেছে। কাপ্তাইয়ে প্রেমিকাকে পাষণ্ড প্রেমিক নিজ হাতে নিশংস ভাবে হত্যা করেছে বলে স্বীকার করে মাহিবুর কামাল।
১২ মার্চে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি উদঘাটিত হয়। ওই দিন বিকালে রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলাধীন ৪নং কাপ্তাই ইউনিয়নে অবস্থিত বিএফআইডিসি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত একটি টয়লেটের ভেতর থেকে এক নারীর লাশ উদ্ধার করে কাপ্তাই পুলিশ। তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ ওই নারীর পরিচয় নিশ্চিত হতে পারেনি পরে রাঙামাটি জেলা পুলিশ সুপার মীর মোদদাছ্ছের হোসেনের দিকনির্দেশনায় কাপ্তাই সার্কেল এডিশনাল এসপি রওশন আরা রব, কাপ্তাই থানা অফিসার ইনচার্জ জসিম উদ্দিন, ও বর্তমান মামলার তদন্ত কারী কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর( কাপ্তাই ফাঁড়ির আইসি) মোঃ শাহীনুর রহমান অনুসন্ধানে নেমে ওই রাতের মধ্যেই নিহত নারীর নাম,পিতা ও মাতার নামসহ ঠিকানা নিশ্চিত করতে পারে। তবে মুল হত্যা কারীকে পুলিশ গ্রেফতার করতে বিলম্ব হওয়ায় পরে হত্যাকাণ্ডটির রহস্য উদ্‌ঘাটনে ছায়া তদন্তে নামে র‌্যাব-৭। জানা যায়, নিহতের নাম হাসিনা বেগম ওরফে সুমি (২৮)। র‌্যাব-৭ এর সফল অভিযানে বের হয়ে এলো খুনি আর কেউ নন, খোদ তাঁর মাদকাসক্ত প্রেমিক মাহিবুর কামাল (২২)। মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করে প্রেমিকাকে খুন করেছেন তিনি। হাসিনার মৃত দেহের পাশে বসেও গাঁজা সেবন করেছেন প্রেমিক মাহিবুর। সিগারেটের আগুনে ঝলসে দিয়েছেন লাশ। হাসিনা নিজেও ছিলেন মাদক ব্যবসায়ী।

মাহিবুর কামালকে গতকাল শনিবার নেত্রকোনা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরপর তাঁর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে খুনের এ নৃশংস বর্ণনা দেয় র‌্যাব। ২০ মার্চ রোববার র‌্যাব-৭ চট্টগ্রামের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ গণমাধ্যমকে বলেন, এই খুনের পেছনে মাদক সেবন, মাদক ব্যবসা, অনৈতিক সম্পর্ক ও পারিবারিক অশান্তি কাজ করেছে।

র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, ১২ বছর আগে দ্বীন ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেছিলেন হাসিনা বেগম। এক কন্যাসন্তানকে দত্তক নিয়েছিলেন এ দম্পতি। দ্বীন ইসলাম থাকতেন বান্দরবানে। হাছিনা তাঁর মেয়েকে নিয়ে কাপ্তাইয়ে থাকতেন। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য ছিল। একপর্যায়ে মাদক ব্যবসা ও বিভিন্ন অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে স্বামী ও নিজ পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে তাঁর প্রায় ঝগড়া হতো। ছয় মাস আগে স্বামীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ হয় তাঁর।

হত্যাকাণ্ডের এক মাস আগে মাহিবুরের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন হাছিনা । মাহিবুর কামাল ১৪ বছর বয়স থেকে মাদকাসক্ত। তিনি প্রায়ই ইয়াবা ও গাঁজা সেবন করেন। মাসিক ১৫ হাজার টাকা বেতনে একটি করাত মিলে ( স’মীলে) কাজ করলেও তাঁর জীবনযাপন ছিল উচ্ছৃঙ্খল। হাসিনার সঙ্গে সম্পর্ক হওয়ার পর মাহিবুরকে বিয়ের জন্য পরিবার থেকে চাপ দেওয়া হয়। অপর দিকে হাছিনা মাহিবুরকে চাপ দিতে থাকেন বিয়ের জন্য।

এই অবস্থায় ১১ মার্চ বিকেলে কাপ্তাই বিএফআইডিসি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে হাছিনার সঙ্গে দেখা করতে আসেন মাহিবুর কামাল। বিয়ের কথা নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে হাসিনা বেগমকে ইট দিয়ে আঘাত করেন মাহিবুর। অজ্ঞান হয়ে পরে গেলে আরও ১৫ বার ইট দিয়ে আঘাত করা হয় মাথায়। এতে হাছিনার মাথা থেঁতলে যায়।

র‌্যাব কর্মকর্তা এম এ ইউসুফ আরও বলেন, ইটের আঘাতে হাছিনা বেগম যখন মারা যান, তখন তাঁর প্রেমিক মাহিবুর লাশের পাশে বসে গাঁজা, সিগারেট সেবন করেন। পরে তাঁর মাথায় লাশ গুমের চিন্তা আসে। এরপর হাসিনার লাশকে স্কুলের পরিত্যক্ত টয়লেটে নিয়ে যান মাহিবুর। তাঁর কাছে থাকা জ্বলন্ত সিগারেটের আগুন দিয়ে হাসিনার মৃত দেহে আগুন ধরিয়ে দেন লাশের পরিচয় গোপন করতে। লাশটির মুখমণ্ডল অর্ধ পোড়া হওয়ার পর রাতে বাসায় চলে যান মাহিবুর। সেদিনই ঘটনাটি সম্পর্কে তিনি তাঁর মাকে খুলে বলেন। মায়ের পরামর্শে কাপ্তাই থেকে পালিয়ে নেত্রকোনা চলে যান। তাঁদের আদি বাড়ি নেত্রকোনায়।

মামলার বাদী ও নিহত হাসিনার মা আমেনা বেগম আমাদের প্রতিনিধিকে বলেন, পারিবারিক অশান্তির কারণে তাঁর মেয়ে মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েছিলেন। মাদক ব্যবসা থেকে ফিরে আসার চেষ্টা করলেও সিন্ডিকেটের কারণে পারেননি। মেয়ের হত্যাকারীর ফাঁসি দাবি করেছেন মা আমেনা বেগম।

এবিষয়ে মামলার তদন্ত কারী কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর মোঃ শাহীনুর রহমান নিশ্চিত করেন ২০ মার্চ দুপুরে র‌্যাব- ৭ হাসিনা হত্যায় জড়িত মুল আসামি মাহিবুর কামালকে কাপ্তাই থানায় সোপর্দ করেন।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.