কুন্টা কিন্টে । মাহবুব হাসান । নিউ ইয়র্ক
আমার শেঁকড ছিঁড়ে রক্তাক্ত করে নিয়ে এসেছিলে কালো ভূমি থেকে ।
মাহবুব হাসান
কুন্টা কিন্টে
আমার শেঁকড ছিঁড়ে
রক্তাক্ত করে নিয়ে এসেছিলে
কালো ভূমি থেকে।
আমি প্রতিবাদে চিৎকার করে
আফ্রিকার হৃদয় চৌচির করলেও
তোমার লালসা আর বাণিজ্যের লোভের পাল
বন্ধ হয়নি অতলান্তিকের অথৈ জলে।
আটলান্টিকের উচ্ছল জলের কান্নায় লেখা রয়েছে
আমার নাম কুন্টা কিনটে!
এই নাম তুমি শোনোনি কখনো!
হাটে হাটে বিক্রি হলাম যখন আমি , আমার সন্তান,
আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশি—
কালো সোনামানিকের দল,
তখনও তোমার মনে হয়নি আমার নাম,
কারণ আমি যেন বন্য পশু এক কিংবা হালের গরু,
আমরা হয়ে উঠলাম তোমার কেনা দাস!
তোমার চোখে কালো সোনা চকচক করে না ।
কেন না তারা সোনালি নয় যে
তোমাদের বন্যভূমিতে রফতানি করবে। তবে সোনালি আভায়, সে গড়ে দেয়
তোমাদের সভ্য হওয়ার ভীত?
তোমার রক্তের ক্ষুধা
কেচে নামিয়ে আনে মানবের সারিতে সেই
কালো মানুষেরা।
আমি বন সাফ করে ফসলের জমি বানালাম,
ফলালাম স্বর্ণময় ফসল,
তুমি গোলা ভরে তুললে সেই সৌরভ,আর
হলে সেই ফসলের মালিক ।
আমি তো সেই কর্মী
যে নির্মাণ করেছে তোমার ঘরবাডি
আর ফলের বাগান।
আমি তোমার সেই ক্রীতদাস,
যার হাড আর মজ্জা শুষে খেয়ে তুমি ধনবান আর হয়েছো বলবান হে শ্বেতাঙ্গ প্রভু!
তোমাকে চিনি আমি
কিন্তু তুমি চেনো না মানুষ কাকে বলে।
তার উৎস কোথায় তা কী জানো?
না, জানো না তুমি!!
সেই কালো গহ্বর থেকে আসা আলোক,
যার নাম আফ্রিকা।
যে রক্ত তোমাকে নাচায় আনন্দে,
যে শেকড় তোমার বলে দাবি করো,
যে শাদা আর
রক্তিমাভার গৌরব করো,
চব্বিশ হাজার বছর সময়ের ঘষায়-মাজায় তুমি
ফ্যাকাসে হয়েছো, রক্তিম হয়েছো তারপর,
আজ তাই নিয়ে
শান দাও নিজের তরবারি,
কচুকাটা করো সভ্যতার গোড়ার আদি মানুষ,
রক্তে ভেসে যায় এদেশের মাটি।
তারা কালো।
কালো কাকে বলে জানো?
না জানো না।
কালো হচ্ছে উৎস,
কালো আদি প্রকৃতি,
আদি নিরাকার !
সেই আদি হত্যাকারী তুমি আজ,
তুমি শেকড় কর্তনকারী দস্যু, তস্কর, লুটেরা,
তুমি আমার গলায় হাঁটু গেড়ে বসে
হত্যা করলে কেন?
কী আমার অপরাধ?
ওই নকল নোট কি আমি বানিয়েছি?
নাকি তুমিই তার প্রস্তুতকারক
এবং সরবরাহকারীর নিয়ন্ত্রক!
আমি শ্বাস নিতে পারছি না শাদা ঘাতক আমার,
আই ক্যান্ট ব্রীদ!!!
প্লিজ গিভ মি এ চান্স ফর ব্রিদিং!
দ্য নেশন ক্যান্ট ব্রিদিং
দ্য হোল ওয়ালর্ড ক্যান্ট ব্রিদিং!!
ক্যান ইউ হিয়ার মি দ্য হার্টলেস হোয়াইট এনিম্যাল!!!
জর্জ ফয়েড কী কেবল আমার নাম?
বেন্জামিন মলয়সি, তিতু মীর, হাজী শরিয়তউল্লাহ, সূর্য সেন, বাঘা যতীন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদ, নেলসন ম্যান্ডেলা, মওলানা ভাসানী, হযরত সোহানী,
অগণন নামেই আমি ছিলাম, আছি এবং থাকবো
হে বেনিয়া!
তোমার দৌলতখানার নির্মাতা! যে আমরাই!!
তুমি কি দেখছো না আমার তৈরি নগরে মহানগরে আজ বেজে উঠেছে নজরুলের কাড়া-নাকাডা
শৃঙ্খল ভেঙে বেরিয়ে আসার গোপন ধ্বনিপুজ্ঞ
কালো- শাদা- বাদামি- পীত আর শোষিত মানুষেরা,
বিচার চায় আমার নিমর্ম হত্যার।
তারা সরল আর বোকা
তাই হত্যাকারীর কাছেই বিচার চায়।
তারা সরল ও শুদ্ধ মানুষ
তাই সভ্যতা ধ্বংসকারীর কাছেই
সভ্য হবার প্রার্থনা জানায়।
তাদের নিরাকার চেতনায় কেবল
মানুষ শব্দটি দীপ্যমান
হত্যা শব্দটি তাদের জ্ঞান-গরিমায় নেই।
অভিধানে তো কখনো ছিলো না।
০৬/১০/২০২০
নিউ ইয়র্ক