বন্যহাতি হত্যার প্রতিবাদ ও বন্য পশুপাখি সংরক্ষণে বনবিভাগের দৃষ্টান্তমুলক পদক্ষেপ নেয়ার দাবীতে পাবনায় মানববন্ধন

0

নিজস্ব প্রতিনিধি : এক সপ্তাহে ৫টি বন্যহাতি হত্যার প্রতিবাদ ও বন্য পশুপাখি সংরক্ষণে বনবিভাগের দৃষ্টান্তমুলক পদক্ষেপ নেয়ার দাবীতে মানববন্ধন করেছে বন্যপ্রানী বিষয়ক সংগঠন ন্যাচার এন্ড ওয়াইল্ডলাইফ কনসারভেশন কমিউনিটি (NWCC)। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর শহরের আব্দুল হামিদ সড়ক প্রেসক্লাবের সামনে এই মানববন্ধনে একাত্বতা প্রকাশ করে বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা এতে অংশ নেয়।

এসময় বন্যহাতি সংরক্ষণে বনবিভাগের দ্রুত হস্তক্ষেপ ও শীতকালে বিভিন্ন এলাকায় পরিযায়ী পাখি শিকার ও কেনা-বেচা বন্ধের জন্য সচেতনতামুলক লিফলেট বিতরন করেন তারা। মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন (NWCC) এর সভাপতি এহসান আলী বিশ্বাস, সহসভাপতি সুপ্রতাপ চাকি, সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান মাহমুদ, সদস্য জুবায়ের হাসান, প্রথমআলো পাবনা বন্ধুসভার সাংগঠনিক সম্পাদক খান আনোয়ার, আনিকা তাসনিম, আফিদ্রা বর্ষা, ভয়েজ ফর ভয়েজলেস এর শাহারিয়ার রাতিন, তারন্যের অগ্রযাত্রার সভাপতি জুবায়ের খান, পাবনা ক্যামেরা জার্নালিষ্ট এ্যাসোসিয়েশনের মাসুদ রানা, জুয়েল আসিফ প্রমুখ।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, বাঁশখালী, কক্সবাজারের চকরিয়া ও শেরপুরের শ্রীবরদীতে দেশে সাত দিনে পাঁচটি হাতির মৃত্যুর ঘটনা খুবই দুঃখজনক । হাতির এমন একের পর এক অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা বিস্মিত হবার মত। দেশে এশীয় প্রজাতির এই হাতিকে বন্যপ্রাণী বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইউসিএন ‘মহা-বিপন্নের তালিকায়’ অন্তর্ভূক্ত করলেও প্রাণীকে রক্ষায় প্রশাসনের সামান্য নজরদারিও নেই। গত সাত দিনে পাঁচটি হাতি মৃত্যুর ঘটনায় এখন পর্যন্ত দুটি মামলা হলেও গ্রেপ্তার হয়েছে মাত্র একজন। বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৪ সাল থেকে গত ১৭ বছরে মানুষের হাতে হত্যার শিকার হয়েছে ১১৮টি হাতি। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাতির মৃত্যু নিয়ে বনবিভাগ যে তথ্য দেয়, বাস্তবে মৃত্যুর সেই সংখ্যা দ্বিগুণ।

বক্তারা বলেন মানুষ নিজেদের প্রয়োজনে হাতির বাসস্থান, করিডর ও বিচরণভূমি ধ্বংস করছে। ফলে তারা লোকালয়ে চলে আসছে, এতে সংঘাত বেশি হচ্ছে। মানুষের ক্রমাগত বনে প্রবেশের ফলে হাতি তার সহজাত ভীতি বোধটুকু হারিয়ে ফেলে। একসময় বেপরোয়া হয়েই মানুষকে আক্রমণ করে বসে। অপরিকল্পিত বনায়ন, শুকনো মৌসুমে পানি কমে যাওয়া, হাতির খাদ্য নয়, এমন কোনো নির্দিষ্ট উদ্ভিদের একক বন তৈরি করা, দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় দুই দেশের আন্তর্জাতিক সীমানা নির্ধারণে ব্যবহৃত কাঁটাতারও হাতির জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ত্রুটিপূর্ণ বনায়ন কৌশলের অংশ হিসেবে বাঁশ, বেতগাছ কেঁটে ইউক্যালিপটাসসহ নানা রকমের বিদেশি গাছ লাগানো হচ্ছে। এ গাছগুলো হাতির খাবারে কোনো কাজে লাগে না। হাতির দিনের প্রায় ১৬ থেকে ২০ ঘণ্টা সময় চলে যায় খাবারের খোঁজে। বনে খাবারের স্বল্পতা, তাই যেসব এলাকায় খাবার পাওয়া যায়, সেসব এলাকায় চলে যাচ্ছে হাতির দল।

বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইন তুলে ধরে বক্তারা বলেন, কোন ব্যক্তি হাতি হত্যা করেছে বলে প্রমাণিত হলে তিনি জামিন পাবেন না এবং অপরাধীকে সর্বনিম্ন দুই বছর এবং সর্বোচ্চ সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং সর্বনিম্ন এক লাখ থেকে সর্বোচ্চ দশ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। একই অপরাধ পুনরায় করলে সর্বোচ্চ ১২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড দেয়ার বিধান আছে।

অন্যদিকে শীতে পরিযায়ী পাখি সংরক্ষনের আইন তুলে ধরে তারা বলেন, ১৯৭৪ সালের বন্যপ্রাণী রক্ষা আইন ও ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী সংরক্ষাণ ও নিরপত্তা আইনে পাখি ও বন্য প্রাণী নিধনের জন্য সর্বোচ্চ এক বছরের জেল, এক লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডের দন্ডিত করার বিধান রয়েছে। দ্বিতীয় বার একই অপরাধ করলে যা দুই বছরের জেল, দুই লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডেরও শাস্তি হতে পারে।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.