পাবনায় সিরিঞ্জে টিকা না দিয়েই সুঁই পুশ তদন্ত প্রতিবেদনের রিপোর্ট দিতে গড়িমসি!

0

পাবনা প্রতিনিধি : তিন কার্যদিবসের বেঁধে দেয়া সময়সীমা অতিক্রম করে তদন্তের স্বার্থে ২ বার সময় পরিবর্তন করে ৭ কার্যদিবসেও তদন্ত প্রতিবেদনের রিপোর্ট দিতে গড়িমসির অভিযোগ উঠেছে পাবনা জেলা স্বাস্থ্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে।

২৫০ শয্যার পাবনা জেনারেল হাসপাতাল টিকা কেন্দ্রে সিরিঞ্জে করোনার টিকা না দিয়েই এক মেডিকেলের শিক্ষার্থীর শরীরে শুধু সুঁই পুশের অভিযোগের ঘটনায় ৩ সদস্যের একটি সদস্য কমিটি গঠন ও টিকা কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত ২ সিনিয়র নার্সকে প্রত্যাহার করা হয়। একই সাথে ওই তদন্ত কমিটিকে ৩ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা দেয় জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, গত ৪ আগস্টে টিকা ছাড়াই শরীরে সুঁই পুশের ঘটনায় ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির প্রধান করা হয় জেলার আটঘরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রফিকুল হাসানকে। অন্য দুই সদস্য হলেন; পাবনা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. জাহিদুর রহমান ও জেলা পাবলিক হেলথ নার্স শাহীনুর বেগমকে। সুত্র আরও জানায়, ঘটনার পরপরই টিকা কেন্দ্রে নিয়োজিত দুই স্টাফ নার্স মেরিনা গোমেজ ও মিতা খাতুনকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।

সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান আটঘরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রফিকুল হাসান বলেন, বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে আমরা তদন্ত সম্পন্ন করতে না পারায় আরও ৪ দিন বাড়িয়ে ৭ দিন করে নেয়া হয়। তিনি বলেন, মঙ্গলবার (১০ আগষ্ট) তদন্ত প্রতিবেদন সিভিল সার্জনের দপ্তরে জমা দেয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে ডা. রফিকুল হাসান বলেন, পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন সিভিল সার্জনের দপ্তরে দাখিল করা হয়েছে। আমাদের এ বিষয়ে কোন কথা বলতে বারং আছে।

পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারি পরিচালক ডা. কেএম আবু জাফর বলেন, ঘটনাটি ঘটার পরপরই বিষয়টি দেখভাল করছেন জেলা স্বাস্থ্য প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না। কোন কিছু জানার থাকলে সিভিল সার্জন মহোদয়ের কাছ থেকে জানতে হবে।

তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে পাবনার সিভিল সার্জন ডা. মনিসর চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সাত কার্য দিবস শেষ হয়নি। তদন্ত প্রতিবেদন এখন তিনি পাননি। তবে তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করেছেন এমনটি জানালো হলে তিনি বলেন, আমি ছুটিতে আছি। শুনেছি আমার টেবিলে প্রতিবেদনটি এসেছে। আমি ছাড়া ওটা অন্য কেউ খুলতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, আমি ছুটি শেষে ১৬ আগস্ট অফিস করার পর এ বিষয়ে আপনাদের জানাতে পারবো।

এদিকে স্থানীয় সুশিল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, বিষয়টি স্পর্শকাতর বলেই দ্রুততম সময়ের মধ্যেই নিষ্পত্তি করার প্রয়োজন ছিল। কেন, কি উদ্দেশ্যে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর কালক্ষেপণ করে প্রতিবেদন প্রকাশে গড়িমসি করছেন বিষয়টি বুঝে আসছে না।

তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তদন্তের স্বার্থে সিভিল সার্জনের দপ্তরে ঘটনার দিনে উপস্থিত ২ সিনিয়র নার্স ও রেডক্রিসেন্টের ৩ সদস্যকে নিয়ে বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে নার্সরা তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। আর রেডক্রিসেন্ট স্যোসাইটির ৩ সদস্য কাগজপত্র নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন বলেই তারা ঘটনার কিছুই দেখেননি এমনটি জানিয়েছেন স্বাস্থ্য দপ্তরের সংশ্লিষ্টদের কাছে।

ভূক্তভোগী মেডিকেল শিক্ষার্থীর বাবা অ্যাডভোকেট আব্দুল হান্নান বলেন, আমার মেয়ের সাথে টিকা নিয়ে যে ঘটনাটি ঘটেছে। সেটি ছিল জনসচেতনার জন্য আমার ম্যাসেঞ্জ। এখন সব মানুষই টিকা নিতে গিয়ে আগে দেখে নিচ্ছেন। এটা আমার এক ধরণের প্রাপ্তি। একই সাথে স্বাস্থ্য বিভাগ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দায়িত্ব ও কর্তব্য অবহেলার জন্য ২ নার্সকে প্রত্যাহারও করেছে। তিনি বলেন, তদন্ত কমিটি ডেকেছিল। আমাদের বক্তব্য দিয়ে এসেছি। এখন স্বাস্থ্য দপ্তর তাদের দাপ্তরিক কর্মকান্ড পরিচালনা করবেন।

উল্লেখ্য, ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের এমবিবিএস শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী সাবাহ মারিয়ম অন্তিকা করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ডোজের টিকা নেওয়ার জন্য বুধবার (৪ আগষ্ট) সকালে পাবনা জেনারেল হাসপাতালের টিকা কেন্দ্রে গিয়ে লাইনে দাঁড়ান। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে টিকা ছাড়াই খালি সিরিঞ্জ তার শরীরে পুশ করা হয় বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীর বাবা অ্যাডভোকেট আব্দুল হান্নান।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.