পাশেই নলকূপ, তবু ৭০বছর ধরে কূয়োতেই ভরসা পরিবারটির

0

সাইফুর নিশাদ, নরসিংদী প্রতিনিধি : ঠিক সত্তর বছর আগে কুয়োটি খনন করিয়েছিলেন আব্দুল বাতেনের পিতা আব্দুল কাদির। পিতার আমল থেকেই এ কুয়োর পানিতে তাদের সব পারিবারিক নির্ভরশীলতা। সেই থেকে আজও এ পাকা কুয়োর পানিতে পরিবারটির সমস্ত গার্হস্থ প্রয়োজন পূরণ হচ্ছে। রান্না-বান্না, অজু, গোসল থেকে শুরু করে খাবার পানির প্রয়োজনেও পরিবারটির একমাত্র নির্ভরশীলতা এ কুয়োটিই।

নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার খিদিরপুর ইউনিয়নের পূর্ব মনতলা গ্রাম। এ গ্রামের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণ নিশাতের মাধ্যমে এ কূয়োর সন্ধান মেলে। এ গ্রামের একমাত্র কূয়োটির মালিক আব্দুল বাতেন (৭২)। তিনি জানান, তার শৈশবে পিতা আব্দুল কাদির পানীয় জলসহ সব রকম প্রাত্যহিক প্রয়োজনে এ কুয়ো খনন করান। শৈশবে খেলাচ্ছলে খননকারীদের সাথে আব্দুল বাতেন নিজেও এর খননকাজে অংশ নেন। তার বাড়িতে এ কুয়োর ধারে বসেই আলাপ হচ্ছিলো তার সাথে।

আলাপ প্রসঙ্গ তিনি জানান, খননের পর থেকে পিতার আমল থেকেই যেভাবে কুয়োটি তার পারিবারিক পানির প্রয়োজন মিটাতো, আজও তাই মিটছে। পার্থক্য এ টুকুই আগে পাড়া প্রতিবেশীরাও এ কুয়োর পানিতে নির্ভরশীল ছিলেন। কালের বিবর্তনে আজ সবার বাড়িতেই নলকূপ। তার বাড়ীতেও আছে নলকূপ। আর তা একেবারে কূয়োর ধারেই। কিন্তু তা সম্পূর্ণই পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গেলো। কিন্তু কি এর কারণ- কেন আজও প্রাচীন কালের মান্ধাতা আমলের কুয়ো পানিই ব্যবহার করছেন পরিবারটি? বিশেষত: একটি নলকূপ থাকার পরও-?
জবাবে হাসেন আব্দুল বাতেন। তিনি বলেন- কারণ কুয়োর পানি সুস্বাদু, সুমিষ্ট, সুপেয়। গরমে আরাম। তার ছেলে গোলাপ(২৭) এর বক্তব্যও হুবহু তাই। দড়ি বালতিতে কূয়ো থেকে তুলে আনা প্রচন্ড রোদের তাপে ঠান্ডা এক গ্লাস পানি পান করে এর সত্যতাও পাওয়া গেলো। তাছাড়া পুরনো ঐতিহ্য এবং স্মৃতিও নষ্ট হতে দিতে চান না আব্দুল বাতেন। তার বক্তব্য, তার জীবদ্দশা পর্যন্ত এভাবেই চলতে থাকুক। তারপর পরবর্তী প্রজন্ম ইচ্ছে হয় কূয়ো ব্যবহার করবে, নয় বন্ধ করে নলকূপে যাবে দেখতে আসবেন না তিনি।

সেখানে উপস্থিত আব্দুল বাতেনের ছেলের বৌ তানিয়া জানান, তারা সাংসারিক সব কাজেই এ কূয়োর পানি ব্যবহার করেন।যদিও তাদের আশেপাশের সবাই নলকূপে নির্ভরশীল। কিন্তু তারা এ কূয়োর বিকল্প আর কিছু ভাবছেন না এখনো।তাদের পড়শি আনোয়ার হোসেন (৩২) জানান, তাদের গ্রামে ৬/৭টি কূয়ো ছিলো আগে। সর্বশেষ কূয়োটি ছিলো এ গ্রামের আ. রহমানের। বন্ধ হয়ে যায় মাত্র বছর তিনেক আগে। এখন অত্র এলাকায় প্রাচীন কুয়োর ঐতিহ্য বলতে আছে কেবল এ কুয়োটিই।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.