শরিফা ফল চাষে সফলতা । পেশা বদল করলেন বাহাউদ্দীন

0

তৌহিদ উদ দৌলা রেজা, মেহেরপুর থেকে :  বিলুপ্ত প্রায় শরিফা ফল। আঞ্চলিক নাম মেওয়া। এ ফলের বাগান করে বেশ সফলতা পেয়েছেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার চেংগাড়া গ্রামের ব্যাংকার বাহাউদ্দীন। গাছের ডালে ডালে শোভা পাচ্ছে শরিফা ফল। বাতাসে দোল খাচ্ছে শরিফা সেই সাথে দোল খাচ্ছে বাগান মালিকের স্বপ্ন। সুস্বাদু ও বেহেস্তি ফল হিসেবে পরিচিত শরিফা চাষে বেশ লাভবান হয়েছেন তিনি। ৮ বিঘা জমিতে বাগান করে প্রতি বছর কয়েক লক্ষ টাকা আয় করছেন তিনি। তার এই সফলতা এলাকার তরুণ যুবকদেরকে শরিফা বাগান করার অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে। মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান চেংগাড়া গ্রামের দাউদ হোসেনের ছেলে বাহাউদ্দীন। তিনি দীর্ঘদিন যমুনা ব্যাংকে চাকরী করেছেন। তবে বাগান করে সফলতার জন্য তিনি চাকরিতে ইস্তফা দিয়েছেন। শখের বশে আর ব্যাতিক্রমি কিছু করার চিন্তা নিয়েই তিন বছর আগে মাত্র চার বিঘা জমিতে শরিফা ফলের বাগান করেন।

স্থানীয় ভাবে বীজ সংগ্রহ করে তা রোপন করেন তিনি। প্রথম বছরে খরচ করেন মাত্র ২০ হাজার টাকা। পরের বছর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তার। সেবছর শরিফা ফল স্থানীয় ফল বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে পান ৪০ হাজার টাকা। স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে বেশি লাভবান হওয়ায় আরো ৬ বিঘা জমিতে শরিফা বাগান করেন। এ বছর তিনি ৫০ হাজার টাকা খরচ করে পেয়েছেন দুই লাখ টাকা। অনুকুল আবহাওয়া নিজের অদম্য পরিশ্রম এবং কৃষি অফিসের পরামর্শে তিনি শরিফা বাগান করে লাভবান হয়েছেন।

স্থানীয় ফল ব্যবসায়ি আব্দুর রহমান জানান, মেওয়া বা শরিফা ফল সুস্বাদু ও পুষ্টিকর হওয়ায় এর চাহিদা রয়েছে। নিজের হাতে বাগান থেকে ফল সংগ্রহ করে স্থানীয় বাজার ও ঢাকাতে পাঠানো হয়। অনলাইনেও এর বেচা কেনা হয়। বাগান থেকে ২৫০ টাকা দরে কিনে সাড়ে চারশ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। এতে লাভ হয় বেশি। একই কথা জানালেন বাগানে শরিফা ফল কিনতে আসা ব্যবসায়ী লিটন মিয়া। শরিফা চাষে আগ্রহী কলেজ শিক্ষক রফিকুল আলম বলেন, স্থানীয় ব্যাবসায়ীদের কাছে গল্প শুনে বাগান দেখতে আসলাম, শুনেছি স্বল্প খরচ আর অল্প পরিশ্রমে বেশি লাভবান হওয়া যায়। তিনি এ শরিফা চাষে সফলতার গল্প শুনেই পরামর্শ নিচ্ছেন বাগান করার। ইতোমধ্যে দুই বিঘা জমি প্রস্তুত করেছেন। বীজ সংগ্রহ করছেন তিনি। রফিকুল আলমের মতো অনেকেই বাহাউদ্দীন ও কৃষি অফিসে পরামর্শ নিচ্ছেন শরিফা বাগান করার জন্য। শরিফা বাগান মালিক বাহাউদ্দীন জানান, আগে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই পাওয়া যেতো সুস্বাদু ফল শরিফা। এখন কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে সেই ফল। এখন কেউ আর এ ফলের গাছ রোপন করেন না। খুব কম খরচেই এ বাগান তৈরি করা যায়।

বাজারে এ ফলের চাহিদা অনেক বেশি। বিলুপ্ত প্রায় এ ফলের গাছ ধরে রাখা ও বাণিজ্যিক ভাবে এ বাগান করার প্রয়াস নিয়েই বাগান করেছি । গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার কেএম সাহাবুদ্দীন আহমেদ জানান, শরিফা একটি বিলুপ্ত প্রায় সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণে ভরপুর ফল। মেহেরপুর জেলার মধ্যে গাংনী উপজেলায় বাহাউদ্দীন এটির বাগান করেছেন। তরুণরাও শরিফা বাগানের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। স্থানীয়রা পরামর্শ নিচ্ছেন বাগান করার জন্য। এতে অনুপ্রাণিত হয়ে অনেকেই বাগান করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে পরামর্শ চাচ্ছেন। এটা দেশি ফল আবাদে খরচ কম। রোগ বালাই একেবারই নেই। অথচ লাভ অনেক বেশি। কৃষি অফিস সব সময় চাষিদেরকে পরামর্শ দিচ্ছেন। এ ফল আবাদের সম্প্রসারণ ঘটলে পুষ্টির চাহিদা অনেকখানি পুর্ণ হবে।

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.