কুড়িগ্রামে পেট্রোল-অকটেন সংকটঃখোলা বাজারে চড়ামূল্যে বিক্রির অভিযোগ

0

আল এনায়েত করিম রনি, কুড়িগ্রাম : সরবরাহ না থাকার অজুহাতে কুড়িগ্রামে পেট্রোল-অকটেনের সংকট দেখা দিয়েছে। আর সুযোগে প্রত্যন্ত অঞ্চলে চড়ামূল্যে জ্বালানী তেল বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে। ক্রেতাদের অভিযোগ জ্বালানীর মূল্য বৃদ্ধির পায়তারা অযুহাত আর ব্যবসায়ীদের দাবী সরবরাহ না থাকায় সংকট তৈরি হয়েছে।

কুড়িগ্রামে ঈদের পরের দিন থেকে পেট্রোল-অকটেন সংকট দেখা দিতে শুরু করে। শুক্রবার কিছু পাম্পে পেট্রোল- অকটেন জুটলেও শনিবার জেলার প্রায় সব পাম্প গুলোতে এই জ্বালানী তেল দেয়া বন্ধ হয়ে যায়। যে দু/একটি পাম্পে জ্বালানী পাওয়া গেলেও চাহিদা তুলনায় পাচ্ছে না গ্রাহকরা। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রত্যন্ত এলাকায় খোলা বাজারে লিটার প্রতি পেট্রোল বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। পেট্রোল-অকটেন সংকট আর খোলা বাজারে হঠাৎ আকাশ চুম্বি দাম হওয়ায় বিপাকে সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে মটরসাইকেল,এ্যাম্বুলেন্সসহ অন্যান্য যানবাহনের চালকরা ভোগান্তিতে পড়েছেন।দ্রুত সমস্যা সমাধান না হলে দেশের উত্তরের জেলার মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়বেন। অভিযোগ রয়েছে পাম্প গুলো থেকে খুচরা ব্যবসায়ীরা ১৩০/১৪০টাকা লিটার কিনে ১৫০টাকায় বিক্রি করছেন।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ প্রায় দুই মাস ধরে রংপুর,পার্বতীপুর এবং পাবনা জেলার বাঘাবাড়ী ডিপো থেকে চাহিদা মত না পাওয়ায় মাঝে মধ্যে কৃত্রি সংকটে পড়ছে জেলার মানুষ। সদর উপজেলার ত্রিমোহনী এলাকায় মেসার্স সাহা ফিলিং স্টেশনে পেট্রোল-অকটেনের মজুত প্রায় শূন্যের কোটায় চলে আসায় শনিবার দুপুর থেকে বিক্রি বন্ধ রাখা হয়েছে। পদ্মা অয়েল কোম্পানির আওতাভুক্ত মেসার্স এসএস ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার
মিজানুর রহমান জানান, এ ফিলিং স্টেশনে ২৫ হাজার লিটার পেট্রোল এবং ১৫হাজার লিটার অকটেন ধারণ ক্ষমতার ট্যাংক রয়েছে। শনিবার দুপুর ১১টার দিকে পেট্রোলের মজুত ৪৭১ লিটার ও অকটেনের মজুত ৪৫১ লিটারে নেমে এসেছে।

এ মজুত ট্যাংকারের ফিল্টারের নিচে নেমে আসায় উত্তোলন করা সম্ভব না হওয়ায় বিক্রি বন্ধ করা হয়েছে। মেসার্স সাহা ফিলিং স্টেশনের সত্ত্বাধিকারী সমরজিৎ সাহা রিন্টু জানান, পদ্মা অয়েল কোম্পানি আওতাধীন তাদের দু’টি ফিলিং স্টেশন রয়েছে। এরমধ্যে ত্রিমোহনী এলাকায় অবস্থিত ফিলিং স্টেশনে ১৫ হাজার লিটার পেট্রল এবং ১০ হাজার লিটার অকটেন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন দু’টি ট্যাংকার রয়েছে। এখানে শনিবার দুপুরে পেট্রলের মজুত ৭০০ লিটার এবং অকটেনের মজুত ৫০০ লিটারে নেমে আসায় বিক্রি বন্ধ করে দেয়া হয়। তিনি আরও বলেন,শহরের আদর্শ পৌর বাজার সংলগ্ন এলাকায় তাদের মেসার্স সাহা ফিলিং স্টেশন নামে আরেকটি পাম্প রয়েছে।

সেখানে সাড়ে ১৪ হাজার লিটার পেট্রোল-১০হাজার লিটার অকটেন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন দু’টি ট্যাংকার রয়েছে। শনিবার সকালে এখানকার মজুত পেট্রল ৪ হাজার লিটার আর অকটেন দেড় হাজার লিটারে নেমে এসেছে। এখানে দৈনিক দেড় হাজার লিটার পেট্রোল ও ৫০০ লিটার অকটেন বিক্রি হয়ে থাকে। এ অবস্থায় সরকারি যানবাহন এবং মোটর সাইকেলে রেশনিং করে পেট্রল ও অকটেন দেওয়া হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাযায়, জেলায় পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েল কোম্পানির আওতাধীন ২৩টি পেট্রোল পাম্প আছে। এছাড়া ২০ জনের মতো এজেন্ট রয়েছে। এ কোম্পানিগুলোর বাঘাবাড়ী, পার্বতীপুর ও রংপুর ডিপো থেকে জ্বালানি তেল সরবরাহ করে। তবে জেলায় ডিজেলের আপাতত কোনো সংকট নেই। এনজিও কর্মী নিশিকান্ত রায় বলেন,আমি দিনাজপুরে একটি এনজিওতে চাকরি করি।

স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মোটরসাইকেল করে দিনাজপুর যাবো। শহরের তিনটি পাম্পে গিয়ে পেট্রোল পেলাম না। রবিবার অফিস করতেই হবে। এখন কিভাবে যাবো দুশ্চিন্তায় আছি। কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম বলেন, প্রায় ১০কি:মি: ৪টি পাম্প ঘুরলাম একটিতেও তেল পেলাম না। এখন বাড়ি ফিরবো কিভাবে আমি জানি না। জেলার কচাকাটা থানার সুবলপাড় বাজারের খোলা বাজারে পেট্রোল বিক্রেতা আব্দুল
মালেক জানান, ১৪০ টাকা প্রতি লিটার পেট্রোল বিক্রি করছেন তিনি। আরেক খুচরা ব্যবসায়ী আবুল হোসেন জানান, পাম্প থেকে ১৩০ টাকা লিটার দরে কিনে ১৫০ টাকায় বিক্রি করছেন তিনি। আরিফুল ইসলাম বলেন,সোয়াবিন তেলের দাম বাড়ায় এখন জ্বালানী তেলের সরবরাহ
কমিয়ে দাম বাড়ার পায়তারা করছে ব্যবসায়ীরা। আর জনগণ ভোগান্তিতে থাকলেও তাদের কিছু যায় আসে না।

কুড়িগ্রাম শাখা পেট্রোল পাম্প মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নজরুল ইসলাম সংকটের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, উত্তরবঙ্গে জ্বালানী ব্যবহারের বিকল্প কোন ব্যবস্থা না থাকা এবং ঈদের লম্বা ছুটির কারণে মটরসাইকেলসহ পেট্রোল-অকটেন চালিত পরিবহনের সংখ্যার বৃদ্ধির কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আগামী খুব দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। জ্বালানী তেলের দাম বাড়ানোর পায়তারাকে তিনি গুজব বলে উড়িয়ে দেন। জেলায় গতবছর এপ্রিল মাসে উত্তরবঙ্গে ১৬জেলায় পেট্রোল সরবরাহ হয়েছিল এক কোটি
৬০লাখ লিটার আর এবছর এপ্রিল মাসে তা দ্বারায় এক কোটি ৯৩লাখ লিটার।

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.