করোনায় বাবা হারানোর এক বছর পূর্ণ হলেও, তিন জমজ সন্তান বলছে বাবা আসবে

0

মাহফুজ আলম, কাপ্তাই : করোনায় আক্রান্ত হয়ে গেল বছর এদিনে অর্থাৎ ২৫মে ২০২০ দিবাগত রাত ১টা ১০ মিনিটের সময় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান পল্লী চিকিৎসক ও ওষুধ ব্যবসায়ী মোঃ পারভেজ (৩৭)। মৃত্যুর এক বছর পার হলো ২৬ মে ২০২১। ১২ মাস অতিবাহিত হলেও তার (পারভেজের রেখে যাওয়া) পাঁচ বছরের অবুঝ ফুটফুটে তিন জমজ কন্যা ফারিয়া, এলিনা ও নাবিলা এখনো জানে না তাদের বাবা পরকালে চলে গেছেন। তিনি যে আর পৃথিবীতে নেই বা ফিরে আসবে না তা তাদের অজানা। প্রিয় বাবাকে এখনো খুজে বেড়ায় তারা। যখন না পায় তখন একটি কথা বলে বাবা বেড়াতে গেছে, আসবে আমাদের জন্য আগের মত কত কিছু আনবে। কথাগুলো শুনা মাত্র চোখের পানি আর আটকিয়ে রাখা যায় না।

আবেগে আপ্লুত হয়ে সবাই বেভুলা হয়ে যায়, পারাপ্রতিবেশী কিংবা আত্মীয় স্বজন। পারভেজ চট্টগ্রাম অক্সিজেন এলাকায় তার বৃদ্ধা মা ও স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বসবাস করতেন। তিনি পরিবারের মধ্যে একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন। পল্লী চিকিৎসক ও ওষুধ ব্যবসায়ী হিসেবে তার সুনাম ও পরিচিত ছিল চট্টগ্রাম অক্সিজেন এলাকাসহ আমান বাজারে। মোঃ পারভেজের দেশের বাড়ি ছিল চট্টগ্রামের রাঙ্গুনীয়া উপজেলার চন্দ্রঘোনা কদমতলী ইউনিয়নের কদমতলী গ্রামে। তিনি ছিলেন পরিবার তিন জমজ কন্যার পরিচালনার একমাত্র অবনন্ধন স্বামীকে হারিয়ে এখন স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তার দিশেহারা। জমজ তিন মেয়ের ভবিষ্যৎ কিভাবে চলবে তা ভেবে কুল কিনারা পাচ্ছে না। জানা যায়, কোভিড-১৯ করোনাভাইরাসে গেল ২০২০ সালের ১৯ মে উপসর্গ দেখা দেয় হতভাগা পারভেজের দেহে।

ঐদিন থেকে চট্টগ্রামের বাসায় আলাদা একটি কক্ষে স্বাস্থ্য বিধি মেনে প্রাথমিক চিকিৎসা করে থাকেন। তিনদিন থাকার পর তার শরীরে করোনা উপসর্গের সংক্রমন দেখা দিলে ২২ মে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরবর্তীতে নমুনা পরীক্ষায় পারভেজের পজেটিভ রিপোর্ট আসে। ২৪ মে হাসপাতালের আইসোলেশনে নিয়ে যাওয়া হয়। ২৫ মে দিবাগত রাত আনুমানিক ১টা ১০ মিনিটের সময় চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে পারভেজ মারা যান। নিহত পারভেজের বৃদ্ধা মা হাজেরা খাতুন বলেন, পারভেজ পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিল। তাকে হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছি। এখনো বুঝতে পারছি না আমাদের মাঝে কি হয়ে গেল। এখন আমি ছেলের বউয়ের নির্ভরশীল। ছেলের বউ তিন জমজ সন্তান ও আমাকে নিয়ে ভরণ পোষণ কত কষ্টে পরিচালনা করছে আমি আমার মৃত ছেলের স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তারের কাছে ঋণী।

উল্লেখ্য, পারভেজের এই অকাল মৃত্যুতে তিন জমজ সন্তানের দিকে চেয়ে এখনো আত্মীয় স্বজন থেকে শুরু করে হিতাকাংখিরা উপকার করে যাচ্ছেন। তবে ইয়াসমিন আক্তার বলেন, তিন জমজ কন্যার ভবিষ্যতের লেখাপড়া ও ভরণ পোষণ থেকে শুরু করে চট্টগ্রামে ভাড়া বাসায় থেকে কষ্টসাধ্য হওয়ার শংকায় মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন। করোনায় মৃত্যু পারভেজের মায়ের আকুতি সবাই যেন ছেলের বিধবা স্ত্রী ও পিতৃহারা সন্তানদের প্রতি মানবিক হন এই প্রত্যাশা করেন। পাশাপাশি পারভেজের জন্য সকলের নিকট দোয়া কামনা করেন।

 

আপনি এগুলোও দেখতে পারেন

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশ করা হবে না.